একটা সময় স্মার্টফোন ক্যামেরা শুধুমাত্র পারিবারিক মুহূর্তগুলোকে দ্রুত বন্দি করে রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। ২০১৯ সালে এসে স্মার্টফোন এর ক্যামেরা এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ও শক্তিশালী ফিচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন ব্যক্তিগত ছবি থেকে শুরু করে প্রফেশনাল ছবি ও স্মার্টফোন দিয়েও তোলা শুরু করেছে। মিডিয়া জগতে স্মার্টফোন ফটোগ্রাফি কিংবা মোবাইল ফিল্মমেকিং নামক জনরাও পরিচিতি পেয়েছে।
বর্তমানে স্যামসাং, গুগল, সনি থেকে শুরু করে ছোট বড় সব কোম্পানিই ক্যামেরা নিয়ে রিসার্চ করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করছে। একটু পিছনের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় মোবাইল ফটোগ্রাফির জগতে হুয়াওয়ে তাদের পি৯ দিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। ক্যামেরা জগতের আরেক কিংবদন্তি লেইকার সাথে মিলে তারা পি৯ এর ক্যামেরাকে অন্য একটি মাত্রা দিয়েছিল। তারপর থেকে তাদের ক্যামেরা সেন্ট্রিক পি সিরিজ একের পর এক চমকই দিয়ে এসেছে।
এবার তারা নিয়ে এসেছে তাদের নতুন চমক পি৩০ প্রো। ধারনা করা হচ্ছে সবদিক থেকেই এটা ২০১৯ সালের সেরা ক্যামেরা ফোন হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ডিএক্সও মার্ক বেঞ্চমার্কে পি৩০ এর সাথে তারা একটু কাটছাঁট করা স্পেসিফিকেশনের পি৩০ এবং মিড রেঞ্জ এর পি৩০ লাইট নামক আরো দুটি ফোন নিয়ে এসেছে। পি৩০ প্রো এবং পি৩০ ফোনদুটো আপাদমস্তক ফ্ল্যাগশিপ গ্রেড ডিভাইস। যদিও পি৩০ ফোনটিতে ছোটখাট কিছু ব্যাপার ছাড় দিতে হবে।
পি৩০ প্রো ফোনটির পিছন দিকেই থাকছে চার চারটি ক্যামেরা সেন্সর। প্রথমটি ৪০ মেগাপিক্সেলের সুপার স্প্রেক্ট্রাম f/1.6 এপারচার এর ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স (ওআইএস), দ্বিতীয়টি ২০ মেগাপিক্সেল f/2.2 এপারচার এর আলট্রা ওয়াইড লেন্স, তৃতীয়টি হলো ওআইএস যুক্ত ৮ মেগাপিক্সেল এর পেরিস্কোপ ক্যামেরা যার সাহায্যে ৫ গুন অপটিক্যাল জুম এবং ৫০ গুন পর্যন্ত ডিজিটাল জুম করা যাবে। আর এর চতুর্থ ক্যামেরাটি হলো টাইম অব ফ্লাইট সেন্সর যা মূলত ডেপথ ম্যাপিং করবে। ৬.৪৭ ইঞ্চির কার্ভড ওলেড ডিসপ্লের ফোনটিতে থাকছে ওয়াটারড্রপ নচ। এর রেজ্যুলেশন ফুল এইচডি প্লাস।
এতে একটি ৩২ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা সংযুক্ত করা হয়েছে। হুয়াওয়ের নিজস্ব চিপ কিরিন ৯৮০ ফোনটির ব্রেইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। চিপটিতে দুটি নিউরাল প্রসেসিং ইউনিট আছে যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ সহায়তা করবে। ৮ জিবি র্যাম এর সাথে ১২৮, ২৫৬ ও ৫১২ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ সুবিধায় এটি পাওয়া যাবে। চাইলে হুয়াওয়ে এর নিজস্ব ডিজাইনের ন্যানো মেমোরি ব্যবহার করে স্টোরেজ বাড়ানোও যাবে।
আইপি ৬৮ রেটেড ফোনটিতে ব্লুটুথ ৫.০, ফোরজি, ওয়ারলেস চার্জিং, রিভার্স ওয়ারলেস চার্জিং, এনএফসি ইত্যাদি প্রযুক্তি থাকছে। টাইপ সি পোর্ট থাকলেও থাকছে না কোন ৩.৫ মিমি পোর্ট। ফোনটিকে পাওয়ার দিচ্ছে ৪২০০ মিলিএম্পিয়ার এর একটি ব্যাটারি যা ৪০ ওয়াট সুপারচার্জ প্রযুক্তি সমর্থন করে।
অন্যদিকে, হুয়াওয়ে পি৩০ ফোনটি তুলনামূলক ছোট আকৃতির। এতে থাকছে ৬.১ ইঞ্চির ডিসপ্লে যা আগেরটির মতো কার্ভড নয় এবং পাওয়া যাবে ৮ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ অপশন নিয়ে। এর আলট্রাওয়াইড লেন্স এর রেজ্যুলেশন কমিয়ে ১৬ মেগাপিক্সেল করা হয়েছে আর এর পেরিস্কোপ ক্যামেরাতে ৩০ গুন পর্যন্ত জুম করা যাবে। পাশাপাশি এতে থাকছে না কোন টাইম অব ফ্লাইট সেন্সর। সবদিক থেকে কাটছাঁট করায় এর ব্যাটারিও একটু কমিয়ে ৩৬৫০ মিলিএম্প এ নিয়ে আসা হয়েছে। এতে ২৫ ওয়াট এর সুপারচার্জ প্রযুক্তি থাকলেও রিভার্স ওয়ারলেস চার্জিং থাকছে না। তবে উপরি পাওনা হিসেবে পি৩০ তে হেডফোন জ্যাক পাচ্ছেন, যা প্রো ভার্সনে নেই। পি৩০ ফোনটি আইপি ৫৩ রেটেড।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বাজারে হুয়াওয়ে তাদের ফোনগুলো প্রিবুকিং নেয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশের বাজারে পি৩০ প্রো স্মার্টফোনটির দাম পড়বে ৮৯,৯৯৯ টাকা। এছাড়া পি৩০ ও পি৩০ লাইট স্মার্টফোন দু’টির দাম পড়বে যথাক্রমে ৬৪,৯৯৯ ও ২৯,৯৯৯ টাকা। পি৩০ প্রো এর প্রি-বুকিংয়ে উপহার হিসেবে থাকছে হুয়াওয়ে স্মার্টওয়াচ জিটি যার বাজার মূল্য ১৯,৯৯০ টাকা। অন্যদিকে পি৩০ এর সাথে থাকছে ফ্রি হুয়াওয়ে বাডস যার মূল্য ১২,৯৯০ এবং পি৩০ লাইটের সাথে থাকছে ব্যান্ড থ্রিই যার মূল্য ১,৮৯০ টাকা।
No comments:
Post a Comment